জীববিজ্ঞান

কোষ রসায়ন (তৃতীয় অধ্যায়)

একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণি - জীববিজ্ঞান - জীববিজ্ঞান প্রথম পত্র | NCTB BOOK

কোষ হলো জীবদেহের গঠন ও কার্যকরী একক। জীব তথা উদ্ভিদ ও প্রাণী এককোষী থেকে বহুকোষী হয় এবং এদের গঠনও সরলতর হতে জটিলতর হয়। সকল প্রকার জীবকোষে সার্বক্ষণিক কোন না কোন রাসায়নিক বিক্রিয়া চলে। এজন্য কোষকে বলা হয় রাসায়নিক কারখানা। 

Content added By
Content updated By

জীবের রাসায়নিক উপাদান

জীবের রাসায়নিক গঠন উপাদানগুলোকে দুটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়, যেমন-অজৈব ও জৈব । অজৈব উপাদানের মধ্যে পানি, বিভিন্ন খনিজ বস্তু, বহু প্রকার আয়ন ও পানিতে দ্রবীভূত গ্যাস প্রভৃতি উল্লেখ্য। পানির পরিমাণ সর্বাধিক সাধারণত ৬০-৯০ শতাংশ এবং গড়ে প্রায় ৮০%। অবশ্য কোন কোন কোষে এটি মাত্র ৫-১০% হতে পারে । খনি বস্তু ও আয়নের পরিমাণ সাধারণত ১-৫%। জৈব পদার্থের মধ্যে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, লিপিড, জৈব এসিড, নিউক্লিয় এসিড এবং বিভিন্ন মিশ্রদ্রব্য, যেমন-হরমোন, ভিটামিন, রঞ্জক, শক্তি সরবরাহকারী দ্রব্য ATP, হাইড্রোজেন বাহর NAD, ইলেকট্রন বাহক সাইট্রোক্রোম প্রভৃতি উল্লেখ্য। এসব যৌগ নানাপ্রকার মৌলিক উপাদানে (element) গঠিত। মৌলিক উপাদানগুলোর মধ্যে অক্সিজেন, কার্বন, হাইড্রোজেন, নাইট্রোজেন, ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস সর্বাধিক পরিমাণে পাওয়া যায়।

Content added By

কার্বোহাইড্রেট এর গঠন ও শ্রেণিবিন্যাস

কার্বোহাইড্রেটঃ জীবের শক্তির ভান্ডার ও উদ্ভিদের গঠনশৈলীর প্রধান উপাদান হচ্ছে কার্বোহাইড্রেট। এক ধরনের জটিল প্রাকৃতিক জৈব যৌগ যা প্রধানত কার্বন (C), হাইড্রোজেন (H) ও অক্সিজেন (O) মৌল নিয়ে গঠিত কার্বোহাইড্রেটে কার্বন, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন পরমাণু ১ : ২ : ১ অনুপাতে যুক্ত থাকে। সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া সূর্যালোকের উপস্থিতিতে CO2 ও পানি থেকে সবুজ উদ্ভিদে কার্বোহাইড্রেট তৈরি হয় ।

পূর্বে কার্বোহাইড্রেটকে কার্বনের হাইড্রেট হিসেবে গণ্য করা হতো এবং (CH,O), কে এদের সাধারণ আণবিক সংকেত ধরা হতো। কিন্তু এই আণবিক সংকেতধারী সকল যৌগ কার্বোহাইড্রেট নয়। কারণ কয়েকটি কার্বোহাইড্রেট হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের অনুপাত ভিন্ন থাকে, যেমন-র‍্যামনোজ (Rhamnose)-এর সংকেত C6H12O5 এটি কার্বোহাইড্রেট হলেও এর মধ্যে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন ২ : ১ অনুপাতে থাকে না। আবার অ্যাসিটিক এসিড (CH3COOH), ফরম্যালডিহাইড (HCHO), ল্যাকটিক এসিড (CH3CHOHCOOH) ইত্যাদিতে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের অনুপাত কার্বোহাইড্রেটের মতো হলেও এরা কার্বোহাইড্রেট নয়। আধুনিক ধারণা অনুসারে নাইট্রোজেন বা সালফার সমৃদ্ধ সামান্য কিছু যৌগকেও অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের কারণে কার্বোহাইড্রেটের অন্তর্ভূক্ত করা হয়। তাই বর্তমান ধারণা অনুযায়ী, যে সকল অ্যালডিহাইড বা কিটোন জাতীয় যৌগে কতকগুলো হাইড্রোক্সিল গ্রুপ থাকে অথবা যারা আর্দ্রবিশ্লেষিত হয়ে কতকগুলো হাইড্রোক্সিল গ্রুপযুক্ত অ্যালডিহাইড বা কিটোন উৎপন্ন করে সেসবকে কার্বোহাইড্রেট বলে। এজন্য কার্বোহাইড্রেটগুলোকে পলিহাইড্রোঅক্সিঅ্যালডিহাইড (Ployhydroxyaldehyde) অথবা পলিহাইড্রক্সি- কিটোন (Polyhydroxyketone) বলাই যুক্তিযুক্ত।


বৈশিষ্ট্যঃ
*অধিকাংশ উদ্ভিদদেহের শুষ্ক ওজনের ৫০-৮০ ভাগ শর্করা
*কার্বোহাইড্রেট দানাদার, তন্তুময় বা স্ফটিকাকার কঠিন পদার্থ। 
*এগুলো স্বাদে মিষ্টি বা স্বাদহীন। 
*কার্বোহাইড্রেটের অধিকাংশই পানিতে অদ্রবণীয় তবে মনোস্যাকারাইড পানিতে দ্রবণীয়। 
*বেশি তাপে অঙ্গারে পরিণত হয়। 
*কার্বোহাইড্রেট এসিডের সাথে মিলে এস্টার গঠন করে।

Content added By

বিভিন্ন ধরনের কার্বোহাইড্রেট

কার্বোহাইড্রেট (Carbohydrate) হল এক ধরনের জৈব রাসায়নিক পদার্থ যা কার্বন, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন মিলে গঠিত হয়। এর সাধারণ সংকেত C m(H2O)n। কার্বোহাইড্রেট প্রধানত তিন প্রকার। যথা- 

মনোস্যাকারাইডঃ যে সব কার্বোহাইড্রেটকে আর্দ্র বিশ্লেষণ করলে আর কোন সরল কার্বোহাইড্রেট একক পাওয়া যায় না তাদের মনোস্যাকারাইড বলে। এর সাধারণ সংকেত CnH2nOn। সাধারণত এরা বর্ণহীন, পানিতে দ্রবণীয়। কিছু মনোস্যকারাইড মিষ্টি স্বাদযুক্ত। যেমন : গ্লুকোজ, ফ্রুকটোজ এবং গ্যলাকটোজ।

ক. গ্লুকোজঃ এই শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ “গ্লুকাস” থেকে। গ্রিক শব্দ গ্লুকাস অর্থ হলো মিষ্টি বা সুইট। গ্লুকোজ একটি মিষ্টি স্বাদ যুক্ত কঠিন কেলাসিত পদার্থ। গ্লুকোজ একটি কার্বোহাইড্রেট শ্রেণীর অ্যালিফেটিক জৈব যৌগ। গ্লুকোজের একটি অণুতে একটি কার্বনিল মূলক এবং পাঁচটি হাইড্রোক্সিল মূলক থাকে। ফুলের মধু, মিষ্টি ফলের রস বা মৌমাছির মৌচাকের মধুতে গ্লুকোজ থাকে। পাকা আঙুরের রসে প্রায় কুড়ি থেকে ত্রিশ শতাংশ গ্লুকোজ থাকে।

গ্লুকোজের উৎস নিম্নরূপ

১. পাকা ফলের রসে, মধুতে এবং পাকা আঙুরের রসে গ্লুকোজ থাকে। আঙুরের রসে প্রচুর পরিমাণে গ্লুকোজ পাওয়া যায় বলে একে দ্রাক্ষা শর্করা বলে। আঙুরের রসে প্রাইস 25 থেকে 30 পার্সেন্ট গ্লুকোজ থাকে।

২. ইক্ষু শর্করা বা সুক্রোজের আর্দ্র বিশ্লেষণ গ্লুকোজ পাওয়া যায়।

C12H22O11+H2O→C6H12O6(গ্লুকোজ)+C6H12O6(ফ্রুক্টোজ)

৩. আলু, ভুট্টা চাল, গম প্রভৃতি শ্বেতসার বা স্টার্চ জাতীয় পদার্থকে লঘু সালফিউরিক এসিড দ্বারা সম্পূর্ণরূপে আর্দ্র বিশ্লেষণ করে গ্লুকোজকে তৈরি করা হয়।

গ্লুকোজের ধর্ম

প্রকৃতিতে পাওয়া সমস্ত যৌগের মত গ্লুকোজের কিছু বিশেষ ধর্ম আছে। নিচে সেই সব গ্লুকোজের ধর্ম আলোচনা করা হলো

১. গ্লুকোজ একটি বর্ণহীন, মিষ্টি গন্ধযুক্ত এবং কেলাসাকার কঠিন পদার্থ।

২. এটি একটি কার্বোহাইড্রেট শ্রেণীর অ্যালিফেটিক যৌগ।

৩. গ্লুকোজ জলে দ্রাব্য।

৪. গ্লুকোজের গলনাঙ্ক 146°C।

৫. এটি স্বাদে মিষ্টি।

খ. ফ্রুক্টোজঃ এতে ছয়টি কার্বন থাকায়, মোনোস্যাকারাইডের হেক্সোজ শ্রেণিতে ফেলা হয়। আবার এতে একটি কিটো গ্রুপ থাকায় একে কিটো হেক্সোজ বলা হয়।

উৎসঃ অধিকাংশ ফ্রুক্টোজ ফল ও মধুতে মুক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। এই কারণে অনেক সময় একে ফলের চিনি (fruit sugar) বলা হয়।  ফল ও মধু ছাড়াও আখের সুক্রোজ ও বীটের সুক্রোজের সাথে ফ্রুক্টোজ পাওয়া যায়।,  

ফ্রুক্টোজের বৈশিষ্ঠ্যঃ

ফ্রুক্টোজ সাদা দানাদার কঠিন পদার্থ। 

এটি পানিতে দ্রবণীয়।

গ. গ্যালাকটোজঃ গ্যালাকটোজ একটি ছয় কার্বন মনোস্যাকচারাইড এটি সাধারণ শর্করার গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত এবং এটি উদ্ভিদ এবং প্রাণী উভয় প্রাণীর মধ্যেই উপস্থিত। উদ্ভিদের টিস্যুগুলিতে, গ্যালাকটোজ গ্লুকোজে রূপান্তর করতে সক্ষম হয়, যা থেকে এটি স্থানের চতুর্থ কার্বন পরমাণুর গ্রুপগুলির অবস্থানের চেয়ে পৃথক হয়। মানবদেহে একটি ল্যাকটোজ উপাদান এবং কয়েকটি নির্দিষ্ট পলিস্যাকারাইড রয়েছে।স্বাভাবিকভাবেই, ল্যাকটোজের হাইড্রোলাইসিসের সময় মানুষের শরীরে গ্যালাকটোজ অন্ত্রে গঠিত হয়।

ওলিগোস্যাকারাইডঃ যে সমস্ত পলিস্যাকারাইডকে আর্দ্র বিশ্লেষণ করলে নির্দিষ্ট সংখ্যক (২ থেকে ৯ টি) মনোস্যাকারাইড পাওয়া যায় সেই সকল পলিস্যাকারাইডকে ওলিগোস্যাকারাইড বলে।

পলিস্যাকারাইডঃ যে সকল কার্বোহাইড্রেটকে আর্দ্র বিশ্লেষণ করে অনেকগুলি মনোস্যাকারাইড অণু পাওয়া যায় তাদেরকে পলিস্যাকারাইড বলে। এরা পানিতে অদ্রবণীয় ও স্বাদহীন। যেমনঃ স্টার্চ, সেলুলোজ ইত্যাদি।উদ্ভিদে শ্বেতসার বা স্টার্চ সঞ্চিত পদার্থ রূপে বিরাজ করে। 

স্টার্চঃ 

এটি একটি পলিস্যাকারাইড। এর সাধারণ সংকেত (C6H10O5)n। সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় সৃষ্ট গ্লুকোজের অধিকাংশই পরিবর্তিত হয়ে শ্বেতসারে পরিণত হয়। শ্বেতসার সাধারণত ঘনীভূত দানা হিসেবে উদ্ভিদ কোষে বিরাজ করে এবং এদের আকার-আকৃতি বিভিন্ন উদ্ভিদে বিভিন্ন রকম। বীজ, ফল, কন্দ প্রভৃতি সঞ্চয়ী অঙ্গে শ্বেতসার জমা হয়। ধান, গম, আলু শ্বেতসারের প্রধান উৎস।হাওয়ার্থ (Haworth) -এর পরীক্ষা থেকে জানা যায় যে, প্রায় ২৪ থেকে ৩০টি এককের সমন্বয়ে একটি স্টার্চ এর অণু গঠিত হয়। স্বাভাবিক অবস্থায় বিভিন্ন উদ্ভিদের মূল ও বীজে সঞ্চিত খাদ্য হিসেবে স্টার্চ জমা থাকে। হাইলাম নামক একটি স্বচ্ছ চকচকে বিন্দুকে কেন্দ্র করে স্টার্চ কণাগুলো গঠিত হয়। হাইলাম বিন্দুর অবস্থানভেদে স্টার্চ কণাগুলো উৎকেন্দ্রিক বা সমকেন্দ্রিক। উদ্ভিদভেদে স্টার্চ কণিকার আয়তন ও আকৃতি বিভিন্ন রকম হতে পারে। গোল আলুর স্টার্চ কণিকা বৃহত্তম এবং চালের স্টার্চ কণিকা ক্ষুদ্রতম।

রাসায়নিক গঠনঃ

অ্যামাইলোজ ও অ্যামাইলোপেকটিন নামক দুটি পলিস্যাকারাইডের সমন্বয়ে শ্বেতসার গঠিত হয়। বিভিন্ন শ্বেতসারের আকার-আকৃতিতে বিরাট পার্থক্য দেখা যায়। আয়োডিন দ্রবণে শ্বেতসার গাঢ় নীল বর্ণ ধারণ করে। জলীয়বিভাজন (Hydrolysis) করলে শ্বেতসার গ্লুকোজে পরিণত হয়।

অ্যামাইলোজঃ 

অ্যামাইলোজ হল α-D- গ্লুকোজের একটি সরল শিকল পলিমার। একটি α-D- গ্লুকোজ অণুর এক নম্বর কার্বনের (C₁) সাথে এবং অপর একটি α-D- গ্লুকোজ অণুর 4 নম্বর কার্বন (C₄) পরস্পরের সাথে α-গ্লাইকোসাইডিক বন্ধন দ্বারা যুক্ত হয়। এরা পানিতে দ্রবণীয় এবং আয়োডিনের সাথে বিক্রিয়া করে নীল বর্ণ ধারণ করে। এতে 60 থেকে 300 একক গ্লুকোজ অণু বিদ্যমান থাকে। 

অ্যামাইলোপেকটিনঃ  

স্টার্চের এ অংশ α-D-গ্লুকোজের একটি শাখাযুক্ত পলিমার। একটি শিকলের এক নম্বর কার্বন (C₁) এবং অপর একটি শিকলের 6 নম্বর কার্বন (C₆) পরমাণু পরস্পরের সাথে α-গ্লাইকোসাইড বন্ধন দ্বারা শাখাযুক্ত শিকল গঠন করে। এরা পানিতে অদ্রবণীয় এবং আয়োডিনের সাথে লাল বর্ণ ধারণ করে। এতে 300-600 একক গ্লুকোজ অনু বিদ্যমান থাকে।

বৈশিষ্ট্য

১. এটি বর্ণহীন, গন্ধহীন ও স্বাদহীন এক ধরনের সাদা নরম অদানাদার পাউডারের মতো জৈব রাসায়নিক পদার্থ।

২. সাধারণ তাপমাত্রায় এরা পানিতে, ইথার ও অ্যালকোহলে অদ্রবণীয়।

৩. আয়োডিন দ্রবণে এরা নীল বর্ণ ধারণ করে।

৪. উচ্চ তাপমাত্রায় এরা ভেঙে ডেক্সিটিনের বড় বড় কণায় পরিণত হয়।

৫. ফেহলিং দ্রবণ স্টার্চ কর্তৃক বিজারিত হয় না।

৬. আণবিক সংকেত (C6H10O5)n। 

সেলুলোজঃ

সেলুলোজ উদ্ভিদের একটি প্রধান গাঠনিক পদার্থ। উদ্ভিদের কোষ প্রাচীর সেলুলোজ দিয়ে গঠিত। অসংখ্য β-D গ্লুকোজ অণু পরস্পর β-১-৪ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সেলুলোজ তৈরি করে। উদ্ভিদের অবকাঠামো নির্মাণে সেলুলোজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উদ্ভিদদেহে যেহেতু কোনো কঙ্কাল নেই,সেহেতু উদ্ভিদের ভার বহনের দায়িত্ব পালন করে সেলুলোজ। তুলায় সেলুলোজ এর পরিমাণ ৯৪%,লিনেনে ৯০% এবং কাঠে ৬০%। সেলুলোজ ঘন H2SO4 বা HCL বা NaOH দ্বারা হাইড্রোলাইসিস করে গ্লুকোজে পরিণত করা হয়। মানুষের পাকস্থলী বা অন্ত্রে সেলুলোজ এনজাইম না থাকায় সেলুলোজ পদার্থ হজম হয়না,তবে গরু-ছাগলে সেলুলোজ পুষ্টি হিসেবে কাজ করে। বন ও বস্ত্র শিল্পের প্রধান উপাদান সেলুলোজ,আর তাই মানব সভ্যতায় এর দান অপরিসীম। পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে বিরাজ করে সেলুলোজ। এককথায় বলতে গেলে সেলুলোজ হলো একটি কার্বোহাইড্রেড-জাতীয় মস্ত বড়ো অণু। 

সেলুলোজ এর ধর্ম

১. সেলুলোজ স্বাদহীন,গন্ধহীন, সাদা ও কঠিন জৈব রাসায়নিক পদার্থ। 

২. এটি পানিতে অদ্রবণীয়,অবিজারক,আণবিক ভর দুই লক্ষ থেকে কয়েক লক্ষ। 

৩. এটি মিষ্টি বিবর্জিত এবং বিজারণ ক্ষমতাহীন। 

৪. আয়োডিন দ্রবণ প্রয়োগে কোনো রং দেয়না। 

৫. এটির ফাইবার সদৃশ ও শক্ত। 

৬. এর কোনো পুষ্টিগুণ নেই।

 

সেলুলোজ এর কাজ

উদ্ভিদের গাঠনিক উপাদান হিসেবে কাজ করে। উদ্ভিদকে দৃঢ়তা ও সুরক্ষা প্রদান করে এবং ভার বহন করে।

সেলুলোজ এর ব্যবহার

* সেলুলোজ কাগজ ও বস্ত্রশিল্পের প্রধান উপাদান।

* এটি নাইট্রেট বিস্ফোরক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

* এটি অ্যাসিটেট ফটোগ্রাফিক ফিল্মে ব্যবহার করা হয়।

* নির্মাণ সামগ্রী ও আসবাবপত্র নির্মাণে সেলুলোজ প্রধান উপাদান হিসেবে যান্ত্রিক সাহায্য প্রদান করে।

* কাঠখেকো কীটপতঙ্গ এর পুষ্টিনালীতে বসবাসকারী এক ধরনের পরজীবী সেলুলোজ নামক উৎসেচক নিঃসৃত করে কাঠ হজমে সাহায্য করে।

Content added By

জীবদেহে কার্বোহাইড্রেট এর ভূমিকা

জীবদেহে কার্বোহাইড্রেট-এর ভূমিকা (Role of Carbohydrate in living organisms):

১. জীবদেহে শক্তির প্রধান উৎস হচ্ছে কার্বোহাইড্রেট। এটি জারিত হয়ে কোষে যে শক্তি সরবরাহ করে ও বিপাকীয় কাজে ব্যবহৃত হয়।

২. গাঠনিক উপাদান (শুকনো ওজনের ৫০-৮০%) হিসেবে উপস্থিত থাকে । 

৩. বিভিন্ন শৈবাল ও উদ্ভিদদেহে স্টার্চ, ইনুলিন ইত্যাদি হিসেবে কার্বোহাইড্রেট সঞ্চিত থাকে এবং প্রয়োজনে পরে ব্যবহৃত হয়।

৪. প্রাণী, ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া গ্লাইকোজেন নামক কার্বোহাইড্রেট সঞ্চয় করে। 

৫. সেলুলোজ, হেমিসেলুলোজ, কাইটিন, পেকটিন পদার্থ ইত্যাদি কোষপ্রাচীরের প্রধান উপাদান ।

৬. কার্বোহাইড্রেট দেহে বাড়তি প্রোটিন যোগানের মাধ্যমে দেহতৈরি ও মেরামতের কাজে সহায়তা করে।

৭. অ্যামিনো এসিড ও ফ্যাটি এসিড বিপাকে সাহায্য করে এবং শরীরে প্রোটিনের অভাব হলে শর্করা থেকে প্রোটিন সৃষ্টি হয় ও প্রোটিনের চাহিদা পূরণ হয়।

৮. RNA ও DNA-র অপরিহার্য উপাদান হচ্ছে যথাক্রমে রাইবোজ এবং ডিঅক্সিরাইবোজ নামক কার্বোহাইড্রেট।

৯. ATP, ADP, GTP, GDP, NAD, NADP, FAD ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ যৌগের গাঠনিক উপাদান হিসেবেও কার্বোহাইড্রেট গুরুত্বপূর্ণ । 

১০. প্রাণিদেহে হাড়ের সন্ধিস্থলে পিচ্ছিল পদার্থ বা লুব্রিকেন্ট (lubricant) হিসেবেও ভূমিকা পালন করে ।

১১. প্রাণিদেহে স্তনগ্রন্থি কোষে শর্করা গ্লুকোজ ও গ্যালাকটোজ থেকে ল্যাক্টোজ ও দুগ্ধ শর্করা সংশ্লেষিত করে। 

১২. মানুষের তিনটি মৌলিক চাহিদা খাদ্য, বস্ত্র, আশ্রয় এর অনেক উপাদান কার্বোহাইড্রেট থেকেই আসে।

১৩. আমাদের শিক্ষা, সভ্যতা ও সংস্কৃতির অন্যতম বাহন কাগজ তৈরি হয় কার্বোহাইড্রেট থেকে । 

১৪. সেলুলোজ জাতীয় কার্বোহাইড্রেট উদ্ভিদকে দৃঢ়তা ও সুরক্ষা প্রদান করে এবং ভার বহন করে ।

Content added By

অ্যামিনো এসিড এর গঠন

অ্যামিনো এসিড (Amino Acids): প্রোটিনের প্রধান গাঠনিক উপাদান হচ্ছে অ্যামিনো এসিড। নোবেল বিজয়ী Emil Fischer, 1902 খ্রিষ্টাব্দে প্রোটিন অণুর গাঠনিক একক হিসেবে অ্যামিনো এসিড আবিস্কার করেন। কোন জৈব এসিডের এক বা একাধিক হাইড্রোজেন পরমাণু অ্যামিনো (-NH.) গ্রুপ দ্বারা প্রতিস্থাপনের ফলে যে জৈব এসিড উৎপন্ন করে তাকে অ্যামিনে এসিড বলে। প্রোটিনকে জীবনের প্রথম জৈব যৌগ বলা হলেও অ্যামিনো এসিড জীবনের মৌলিক বস্তু হিসেবে চিহ্নিত। কারণ, অ্যামিনো এসিডের অণু শৃঙ্খলিত হয়ে প্রোটিন গঠিত

হয়। প্রোটিনকে আর্দ্রবিশ্লেষণ করে ২০টির অধিক অ্যামিনো এসিড পাওয়া যায়। প্রতিটি অ্যামিনো এসিডে একটি অ্যামিনো

গ্রুপ (-NH2, amino group), একটি কার্বক্সিল গ্রুপ R – C-COOH

(-COOH. carboxyl group) ও একটি অ্যামিনো এসিড-এর নির্দিষ্ট গ্রুপ (R) থাকে।R গ্রুপ শুধু একটি হাইড্রোজেন অণু যেমন- গ্লাইসিন অ্যামিনো এসিড অথবা একগুচ্ছ অণু হতে পারে। উভয় গ্রুপ আলফা কার্বন নামক একটি চিত্রঅণুর সাথে যুক্ত থাকে। একটি অ্যামিনো এসিডের কাঠামো হলো C-C-N. উদ্ভিদদেহে বিভিন্ন প্রকার অ্যামিনো এসিড আছে। এর মধ্যে বিশ প্রকার অ্যামিনো এসিড বিভিন্ন ভাবে সমন্বিত ও সজ্জিত হয়ে বিভিন্ন রকম প্রোটিন তৈরি করে।


অ্যামিনো এসিড-এর বৈশিষ্টঃ

• মানবদেহে বিদ্যমান প্রায় সবগুলো অ্যামিনো এসিডই ৫-অ্যামিনো এসিড 
• অ্যামিনো এসিড বর্ণহীন, স্ফটিকাকার পদার্থ 
• এরা পানিতে দ্রবণীয়। 
• বিশুদ্ধ প্রোটিনকে কোন রাসায়নিক পদার্থ "কিংবা এনজাইম-এর সাহায্যে সম্পূর্ণ আর্দ্রবিশ্লেষণ করলে অ্যামিনো এসিড পাওয়া যায়। 
• এক বা একাধিক টাইপের অ্যামিনো এসিড পেপটাইড বন্ধনীর মাধ্যমে সংযুক্ত হয়ে প্রোটিন গঠন করে।

কাজঃ

* প্রোটিন সংশ্লেষ করা। 
* ইউরিয়া সংশ্লেষে সহায়তা করা। 
* দেহ গঠনে সাহায্য করা । 
* দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো।
* দেহে pH নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করা।
* ইউরিয়া সংশ্লেষণে সাহায্য করা।
* দুগ্ধবতী মায়ের স্তনগ্রন্থিতে বিভিন্ন ধরনের অ্যামিনো এসিড থেকে দুগ্ধপ্রোটিন কেসিনোজেন সংশ্লেষিত হয়।
* ত্বক, চুল ও চোখের কোরয়েড স্তরে বিদ্যমান মেলানিন রঞ্জক সৃষ্টিতে অ্যামিনো এসিড প্রধান ভূমিকা পালন করে।

অ্যামিনো এসিডের শ্রেণিবিভাগ (Classification of Amino Acids):

জীবদেহে সর্বমোট ২০টির অধিক অ্যামিনো এসিড রয়েছে এবং এদেরকে মোটামুটি ৩টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে, যথা - অ্যালিফ্যাটিক অ্যামিনো এসিড,  অ্যারোমেটিক অ্যামিনো এসিড, ও. হিটারোসাইক্লিক অ্যামিনো এসিড।

১. অ্যালিফ্যাটিক অ্যামিনো এসিড (Aliphatic amino acids) : যখন অ্যামিনো এসিডে সাধারণ সংকেতে প্রদত্ত R-এর নির্দিষ্ট গ্রুপটি অ্যালিফ্যাটিক যৌগ হয় তখন তাকে অ্যালিফ্যাটিক অ্যামিনো এসিড বলে।

২. অ্যারোমেটিক অ্যামিনো এসিড (Aromatic amino acid) : অ্যামিনো এসিডের সাধারণ সংকেতে প্রদত্ত R এর নির্দিষ্ট গ্রুপটি অ্যারোমেটিক যৌগ হলে তাকে অ্যারোমেটিক অ্যামিনো এসিড বলে। এ জাতীয় অ্যামিনো এসিড দুটির  নাম টাইরোসিন ও ফিনাইলঅ্যালানিন ।

৩. হিটারোসাইক্লিক অ্যামিনো এসিড (Heterocyclic amino acid), অ্যামিনো এসিডে অ্যালিফ্যাটিক রাজ: অ্যারোমেটিক অ্যামিনো এসিডের বিপরীত ধর্ম পরিলক্ষিত হলে সেই অ্যামিনো এসিডকে হিটারোসাইক্লিক অ্যামিনে এসিড বলা হয়। উদাহরণ- ট্রিপটোফ্যান, প্রোলিন, হিস্টিডিন

সাধারণত ২০টি অ্যামিনো এসিড প্রোটিন গঠনে অংশগ্রহণ করে। এদেরকে প্রোটিন অ্যামিনো এসিড বলে।

এছাড়াও এমন অনেক অ্যামিনো এসিড আছে যেগুলো প্রোটিনের উপাদান নয়, তবে প্রোটিন সংশ্লেষণের সাথে সম্পৃক্ত তাদেরকে নন-প্রোটিন অ্যামিনো এসিড বলে। সাইট্রলিন, হেমোসেরিন, অরনিথিন এদের উদাহরণ।

বিশটি প্রোটিন অ্যামিনো এসিড হচ্ছে :

১। লিউসিন, ২। আইসোলিউসিন, ৩। লাইসিন, ৪। মেথিওনিন, ৫।ভ্যালিন, ৬/ সেরিন, ৭। প্রোলিন ৮। থ্রিওনিন, । অ্যালানিন, ১০। টাইরোসিন, ১১। হিস্টিডিন, ১২। অ্যাসপারাজিন, ১৯৩। সিস্টিন, ১৪'। আরজিনিন ১৯৯৫। গ্লাইসিন, ১৫। ট্রিপ্টোফ্যান, ১৭। গ্লুটামিন, ১৮।প্লুটামিক এসিড, ১৯। অ্যাসপার্টিক এসিড এবং ২০। ফিনাইল অ্যালানিন।

Content added By
প্রোটন ত্যাগ করে
পোলার যৌগ
পানিতে দ্রবণীয়
পানির সাথে হাইড্রোজেন বন্ধন গঠন

প্রোটিনের গঠন ও শ্রেণিবিভাগ

প্রাণি ও উদ্ভিদের দেহকণা ও পেশিকোষের অন্যতম উপাদান হল প্রোটিন। সর্বপ্রথম প্রাণি ও উদ্ভিদ কোষের নাইট্রোজেন সম্বলিত রাসায়নিক পদার্থকে প্রোটিন নামে অভিহিত করা হয়।

দুধ, ডিম, মাছ, মাংস, ছানা ইত্যাদিতে প্রায় সব ক্যাটি অত্যাবশ্যকীয় অ্যামাইনো এসিড পাওয়া যায়। এজন্য এসব খাদ্যের প্রোটিনকে উৎকৃষ্ট বা সম্পূর্ণ প্রোটিন বলে। অত্যাবশ্যকীয় অ্যামাইনো এসিডগুলো হল:
লাইসিন
আইসোলিউসিন
লিউসিন
মিনোইন
ট্রিপটোফ্যান
প্রিওনাইন
ভেনিল এবং
ফিনাইলএলানিন।

প্রোটিন জীবদেহের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জৈব রাসায়নিক পদার্থ। বিভিন্ন অ্যামাইনো অ্যাসিড বিভিন্নভাবে শৃঙ্খলিত হয়ে এক একটি প্রোটিন গঠন করে। আর অ্যামাইনো অ্যাসিড হলো প্রোটিনের মূল গাঠনিক একক। প্রোটিন অণু বহু সংখ্যক অ্যামাইনো অ্যাসিডের সমন্বয়ে তৈরি। প্রোটিন শব্দটি সর্বপ্রথম প্রয়োগ করেন জি. মুলার ১৮৩৯ খ্রিস্টাব্দে। প্রোটিন অসংখ্য অ্যামাইনো অ্যাসিড নিয়ে গঠিত বৃহদাকার যৌগিক জৈব অণু। একটি কোষের অভ্যন্তরে সারাক্ষণ শত শত প্রকার প্রোটিন থাকে।
জীবদেহের প্রায় সর্বত্রই প্রোটিন বিরাজমান। জৈব ক্রিয়া-বিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে এনজাইম, অ্যান্টিবডি, হরমোন। এগুলো সবই প্রোটিন। সব এনজাইম প্রোটিন কিন্তু সব প্রোটিন এনজাইম নয় ।

প্রোটিনের গঠন :
প্রোটিনের মৌলিক উপাদান হচ্ছে কার্বন (C), হাইড্রোজেন (H), অক্সিজেন (O2) এবং নাইট্রোজেন (N) ১৬% থাকে। এই মৌলগুলি দিয়ে প্রথমে অ্যামাইনো এসিড তৈরি হয়।

প্রোটিনের রাসায়নিক ভাঙনের ফলে বিভিন্ন প্রকার অ্যামাইনো এসিড পাওয়া যায়। প্রায় ২৫টি অ্যামাইনো এসিডের সন্ধান এ পর্যন্ত পাওয়া গেছে একাধিক অ্যামাইনো এসিডের সংযোগের ফলে প্রোটিন গঠিত হয়।এক এক ধরনের অ্যামাইনো এসিড এক এক ধরনের প্রোটিন তৈরি করে। দুধের প্রোটিন থেকে ডালের প্রোটিনের অ্যামাইনো এসিডের সংগঠন ভিন্ন। আবার ডিমের প্রোটিনের থেকে মাছের প্রোটিন ভিন্ন বিভিন্ন অ্যামাইনো এসিড বিভিন্ন সংখ্যায় ও নানাভাবে যুক্ত হয়ে এক প্রকারের প্রোটিন তৈরি করে। প্রোটিন গঠনকারী প্রায় ২৫টি অ্যামাইনো এসিড বিদ্যমান। এদের মধ্যে ৮টি মানবদেহের জন্য অত্যাবশ্যক। এই অ্যামাইনো এসিডগুলো দেহে অন্যান্য খাদ্য হতে তৈরি হতে পারে না। অথচ দেহে প্রোটিন তৈরিতে সব কয়টি অ্যামাইনো এসিড থাকা প্রয়োজন। সেজন্য বিশেষ বিশেষ প্রোটিন জাতীয় খাদ্য হতে এই এসিডগুলো মানবদেহে সরবরাহ করতে হয়।

প্রোটিনের বৈশিষ্ট্য :
প্রোটিন কলয়েড প্রকৃতির, অধিকাংশ কেলাসিত বহুবিধ ভৌত ও রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় প্রোটিনের প্রকৃতির পরিবর্তন ঘটানো যায়। প্রোটিন পানিতে, লঘু অ্যাসিডে, ক্ষার ও মৃদু লবণের দ্রবণে দ্রবণীয়। এটি কার্বন, হাইড্রোজেন ও নাইট্রোজেন দ্বারা গঠিত। এতে সালফার, আয়রন ও তামা থাকে, অ্যাসিড প্রয়োগ করলে প্রোটিন তঞ্চিত হয়। এতে প্রোটিনের আণবিক গঠনের পরিবর্তন হয় এবং প্রোটিনকে আর্দ্রবিশ্লেষণ করলে অ্যামাইনো অ্যাসিড পাওয়া যায়।

প্রোটিনের কাজ :
১. কোষে প্রোটিন সঞ্চিত খাদ্য হিসেবে কাজ করে এবং দরকারে শক্তি উৎপাদন করে।

২. কোষের বিভিন্ন অঙ্গাণু এবং কোষ ঝিল্লী গঠনে সহায়তা করে।

৩. এনজাইম হিসেবে জীবদেহের ক্রিয়া-বিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে তথা জীবদেহকে সচল রাখে।

৪. অ্যান্টিবডির গাঠনিক উপাদান হিসেবে দেহের প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি করে এবং দেহকে রোগ মুক্ত রাখে।

৫. জীবদেহের প্রয়োজনীয় হরমোন উৎপাদন করে।

৬. নিউক্লিয়াস এবং নিউক্লিক অ্যাসিডকে হিস্টোন প্রোটিন কার্যকর রাখে।

৭. কিছু প্রোটিন বিষাক্ত। এগুলো খেলে অনেক জীব মরে যায়। যেমন- সাপের বিষ এক প্রকার প্রোটিন। অনেক উদ্ভিদে বিষাক্ত প্রোটিন থাকে। ফলে এরা অনেক পশু-পাখির আক্রমণ থেকে রক্ষা পায়।

৯. হিমোগ্লোবিন প্রোটিন প্রাণী দেহের সমস্ত কোষে অক্সিজেন সঞ্চালন করে।

১০. মানবদেহের পেপটাইড থেকে এক প্রকার প্রোটিন উৎপাদিত হয়। এটি ডিফেনসিভ অ্যান্টিবডি হিসেবে কাজ করে।

১১. ইন্টারফেরন একটি কোষীয় প্রোটিন। দেহে ভাইরাস আক্রমণ করলে এটি স্বতঃস্ফুর্তভাবে তৈরি হয়। ধারণা করা হচ্ছে ইন্টারফেরন ক্যান্সার ও ভাইরাসজনিত রোগে ব্যবহার করা যাবে।

প্রোটিনের প্রকারভেদঃ
ভৌত, রাসায়নিক গুণাবলি এবং দ্রবণীয়তার উপর নির্ভর করে প্রোটিনকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। যথা-

ক) সরল প্রোটিন,

খ) যুগ্ম প্রোটিন এবং

গ) উৎপাদিত প্রোটিন।

ক) সরল প্রোটিন :
যে সব প্রোটিনকে অ্যাসিড বা এনজাইম দ্বারা আর্দ্রবিশ্লেষণ করলে শুধুমাত্র অ্যামাইনো অ্যাসিড পাওয়া যায় তাদেরকে বলা হয় সরল প্রোটিন।

দ্রবণীয়তার উপর ভিত্তি করে এদেরকে সাত ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা-

১. অ্যালবিউমিন :

যে সকল সরল প্রোটিন পানিতে সহজে দ্রতীভূত হয় এবং ঘোলাটে দ্রবণ তৈরি করে তাদেরকে বলা হয় অ্যালবিউমিন।

এরা পানিতে এবং লঘু লবণ দ্রবণে দ্রবণীয়। তাপ দিলে এরা জমাট বাধে। বার্লি ও বিটা-অ্যামাইলোজ একটি অ্যালবিউমিন। ডিমের সাদা অংশে রক্তরসে ও দুধে অ্যালবিউমিন থাকে। অ্যালবিউমিন এর অপর নাম লিউকোসিন, ল্যাকটালবুমিন।

২. গ্লোবিউলিন :

গ্লোবিউলিন পানিতে সাধারণত অদ্রবণীয়, তবে লঘু লবণ দ্রবণে দ্রবণীয়। গ্লোবিউলিনও তাপে জমাট বাঁধে। বীজে এ ধরনের প্রোটিন বেশি পরিমাণে থাকে। এছাড়াও ডিমের কুসুম এবং রক্তরসে গ্লোবিউলিন থাকে।

৩. গ্লুটেলিন :

গ্লুটেলিন পানিতে অদ্রবণীয়, তবে লঘু অ্যাসিড বা লঘু ক্ষার দ্রবণে দ্রবণীয়। গ্লুটেলিন তাপে জমাট বাঁধে না।

শস্য দানায় এ জাতীয় প্রোটিন বেশি থাকে। গমের গ্লুটেলিন এবং চালের অরাইজেনিন গ্লুটেলিন প্রোটিনের উদাহরণ।

৪. প্রোলামিন :

যে সকল সরল প্রোটিন অ্যালকোহলে ( ৭০-৮০%) দ্রবীভূত হয় তাদেরকে বলা হয় প্রোলামিন।

প্রোলামিন তাপে জমাট বাঁধে না। হাইড্রোলাইসিস শেষে এরা বেশি পরিমাণে প্রোলিন ও অ্যামোনিয়া উৎপন্ন করে। ভুট্টার জেইন, গম ও রাইয়ের গ্লিয়াডিন এবং বার্লিন হর্ডিন ইত্যাদি প্রোলামিনের উদাহরণ।

৫. হিস্টোন :

এ জাতীয় প্রোটিন পানিতে দ্রবনীয়। এদের মধ্যে বেশি পরিমাণে ক্ষারীয় অ্যামাইনো অ্যাসিড যেমন আরজিনিন, লাইসিন থাকে। এরা তাপে জমাট বাঁধে না। এদেরকে নিউক্লিয়াসে এবং নিউক্লিক অ্যাসিডের সাথে বেশি দেখা যায়। যেমন- নিউক্লিয়োহিস্টোন।

৬. প্রোটামিন :

এরা সবচেয়ে ক্ষুদ্র প্রোটিন। প্রোটামিনগুলো পানিতে এবং অ্যামোনিয়াম হাইড্রোক্সাইড এ দ্রবর্ণীয়। যেমন কুপিন, স্যামিন। এতে ক্ষারীয় অ্যামাইনো অ্যাসিড যেমন- আরজিনিন বেশি থাকে। এদেরকে নিউক্লিয়াসে পাওয়া যায় এবং নিউক্লিক অ্যাসিডের সাথেও দেখা যায়। প্রোটামিনে কোন সালফার থাকে না এবং টাইরোসিন, ট্রিপ্টোফ্যানও থাকে না। এরা তাপে জমাট বাঁধে না।

৭. স্ক্লেরোপ্রোটিন :

এরা পানি এবং মৃদু লবণ দ্রবণে অদ্রবণীয়। প্রাণীদেহের হাড়, চুল, নখ, ত্বক, সংযোগ টিস্যুতে এ প্রোটিন বেশি থাকে। হাড়ে কোলাজিন, ইলাস্টিন এবং চুলে কেরাটিন থাকে।

খ) যুগ্ম প্রোটিন :
যে সকল প্রোটিনের সাথে কোন অপ্রোটিন অংশ যেমন প্রোসথেটিক গ্রুপ যুক্ত থাকে তাকে যুগ্ম প্রোটিন বলা হয়। এর অপর নাম কনজুগেটেড প্রোটিন। একে প্রোসথেটিক গ্রুপের প্রকৃতিভেদে ছয় ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা

১. নিউক্লিয়োপ্রোটিন :

প্রোটামিন ও হিস্টোন জাতীয় ক্ষারীয় প্রোটিনের সাথে নিউক্লিক অ্যাসিড যুক্ত হয়ে তৈরি হয় নিউক্লিয়োপ্রোটিন।

যেমন- নিউক্লিয়োপ্রোটামিন ও নিউক্লিয়োহিস্টোন। নিউক্লিয়োপ্রোটিন পানিতে দ্রবণীয়। এক্ষেত্রে নিউক্লিক অ্যাসিড প্রসথেটিক গ্রুপ। যেমন- নিউক্লিয়োপ্রোটামিন ও নিউক্লিয়োহিস্টোন।

২. লিপোপ্রোটিন :

লিপোপ্রোটিনে সরল প্রোটিন ও বিভিন্ন প্রকার লিপিড তথ্য ফ্যাটি অ্যাসিড, কোলেস্টেরল, ফসফোলিপিড যুক্ত থাকে। এক্ষেত্রে ফ্যাটি অ্যাসিড, কোলেস্টেরল, ফসফোলিপিড প্রোসথেটিক গ্রুপ। বিভিন্ন ঝিল্লীর গাঠনিক উপাদান হিসেবে লিপোপ্রোটিন পাওয়া যায়। ডিমের কুসুম, দুধ ও কোষের বিভিন্ন ধরনের বিল্লীতে লিপোপ্রোটিন পাওয়া যায়।

৩. গ্লাইকোপ্রোটিন :

গ্লাইকোপ্রোটিনে সরল প্রোটিনের সাথে প্রোসথেটিক গ্রুপ হিসেবে কার্বোহাইড্রেট যুক্ত থাকে। তার মানে সরল প্রোটিন ও শর্করা যুক্ত হয়ে গ্লাইকোপ্রোটিন হয়।

যেমন- গ্লুকোস্যামাইন (Glucosamine), গ্যালাকটোস্যামাইন (Galactosamine)। কোষের ঝিল্পীর বা কোষ মেমব্রেনে বিশেষত মিউকাস মেমব্রেনে গ্লাইকোপ্রোটিন পাওয়া যায়, তাই একে মিউকোপ্রোটিন বলা হয়।

৪. ক্রোমোপ্রোটিন :

ক্রোমোপ্রোটিনে সরল প্রোটিনের সাথে প্রোসথেটিক গ্রুপ হিসেবে রঞ্জক পদার্থ যুক্ত থাকে। যথা ফাইকোবিলিন, ইহা নীলাভ সবুজ শৈবাল ও লাল শৈবালে থাকে। সরল প্রোটিন ও রাইবোফ্ল্যাভিন মিলে ফ্ল্যাভোপ্রোটিন তৈরি হয়। ক্রোমোপ্রোটিন উদ্ভিদের ফুল ও ফলের রং সৃষ্টিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

৫. ফসফোপ্রোটিন :

ফসফোপ্রোটিনে সরল প্রোটিনের সাথে প্রোসথেটিক গ্রুপ হিসেবে ফসফোরিক অ্যাসিড যুক্ত থাকে। যেমন- দুধে উপস্থিত ক্যাসিনোজেন বা দুগ্ধ প্রোটিন, ডিমের কুসুমের ভাইটেলিন (Vitelline) ইত্যাদি।

৬. মেটালোপ্রোটিন :

মেটালোপ্রোটিনের প্রোসথেটিক গ্রুপটি লৌহ, দস্তা, তামা, কোবাল্ট, ম্যাঙ্গানিজ, ম্যাগনেসিয়াম প্রভৃতি ধাতুর আয়ন। এরা প্রধানত এনজাইমের অ্যাকটিভেটর।

গ) উৎপাদিত প্রোটিন :
এসব প্রোটিন প্রকৃতিতে মুক্ত অবস্থায় থাকে না। তাপের প্রভাবে এনজাইমের বা রাসায়নিক পদার্থের ক্রিয়া-বিক্রিয়ায় অথবা কৃত্রিম উপায়ে প্রোটিন অণু থেকে তৈরি হয়। যেমন- পেপটাইড, প্রোটিয়েজ ইত্যাদি।

Content added By

জীবদেহে প্রোটিনের ভূমিকা

জীবদেহে প্রোটিনের ভূমিকাঃ

জীবদেহ গঠনের জন্য প্রোটিন অপরিহার্য। জীবদেহে প্রোটিনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাগুলো নিচে আলোচনা করা হলোঃ

১. দেহের ক্ষয়পূরণ ও বৃদ্ধির জন্য প্রোটিন অপরিহার্য। বিভিন্ন জৈবনিক ক্রিয়াকলাপ, যেমন- শ্বসন, রেচন, ইত্যাদি সম্পন্ন করার জন্য দেহের যে ক্ষয়ক্ষতি হয় তা পূরণ করার জন্য প্রোটিনের প্রয়োজন হয়।

২. জীবদেহের এনজাইম জৈব-অনুঘটকরূপে কাজ করে। এনজাইম প্রোটিন দিয়ে তৈরি। দেহের রাসায়নিক ক্রিয়া অর্থাৎ বিভিন্ন জটিল যৌগের সংশ্লেষ কিংবা জটিল যৌগের ভাঙনের জন্য এনজাইম। উৎসেচক আবশ্যক। অর্থাৎ প্রোটিন পরোক্ষভাবে জীবদেহের বিভিন্ন বিপাকীয় ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে।

৩. জীবদেহের হরমোন রাসায়নিক দূত (chemical messenger) হিসেবে কাজ করে। বিশেষ করেনা হরমোন, যেমন- ইনসুলিন, সোমাটোট্রফিক হরমোন (STH), লিউটিফিন হরমোন (LTH) ইত্যাদি মূল
প্রোটিনে গঠিত।

৪. দেহে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবডি এক ধরনের প্রোটিন।

৫. রক্তের হিমোগ্লোবিন একধরনের যুগ্ম প্রোটিন। এটি গ্লোবিন নামক প্রোটিন ও হিম নামক রঞ্জক নিয়ে গঠিত হয়।

৬. প্রোটিন দেহে শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে। ১ গ্রাম প্রোটিন জারণে ৪.১ কিলোক্যালোরি শক্তি উৎপন্ন হা দেহে শর্করার অভাব হলে প্রোটিন জারণের দ্বারা শক্তি উৎপন্ন হয়। আটটি অ্যামিনো এসিড (লিউসিন, আইসোলিউসিন, লাইসিন, মিথিওনিন, ফিনাইল অ্যালানিন, ট্রিপটোফেন,থ্রিওনিন ও ভ্যালিন ছাড়া দেহ গঠিত হতে পারে না। এগুলোকে বলে অপরিহার্য অ্যামিনো এসিড। বিভিন্ন প্রোটিন জাতীয় খাদ্যের মাধ্যমে অপরিহার্য অ্যামিনো এসিডগুলো দেহে সরবরাহ হয়ে থাকে। প্রতিটি স্টা

৭. কোষের প্রোটোপ্লাজম অ্যামিনো এসিড থেকে সংশ্লেষিত হয়।

৮. কোষের প্রোটোপ্লাজম, ঝিল্লি ও অঙ্গাণুসমূহের প্রধান গাঠনিক উপাদান প্রোটিন। প্রাণিদেহের পেশি, চর

৯. চুল, শিং, নখ, আইন ও অন্যান্য অনেক গঠন প্রোটিন দিয়ে গঠিত। সাপের বিষ ও কিছু উদ্ভিদে অবস্থিত বিশেষ ধরনের প্রোটিন জীবদেহের প্রতিরক্ষায় ব্যবহৃত হয়।

১০. কোষের প্রোটিন কোষীয় তারল্য রক্ষা করে শুক্ষতা থেকে কোষকে রক্ষা করে।

১১. ইন্টারফেরণ (Interferon) একধরনের প্রোটিন যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার এক ধরনের রা দূত। এটি শরীরে ভাইরাস প্রতিলিপনকে প্রতিরোধ করে।

১২. প্রোটিনের গাঠনিক উপাদান অ্যামিনো এসিড (যেমন- আজিনিন ও টাইরোসিন) থেকে যকৃতে 
মেলানিন সংশ্লেষিত হয়।

অপরিহার্য অ্যামিনো এসিডের উপস্থিতি অনুসারে প্রোটিনের গুণগত মান বিচার করা হয়। যথা-

১. প্রথম শ্রেণির প্রোটিন (First class protein or Complete protein) : যে সব প্রোটিনে সবকটি অপরি অ্যামিনো এসিড থাকে সেগুলোকে প্রথম শ্রেণির প্রোটিন বা সম্পূর্ণ প্রোটিন। যেমন-দুধ, ডিম, মাছ, মাংস সাধারণত সকল প্রাণীজ প্রোটিনই প্রথম শ্রেণির প্রোটিন। উদ্ভিজ্জ প্রোটিনের মধ্যে বাদাম, সয়াবিন, ঘটেনিন ( ভুট্টায় থাকে) ইত্যাদি প্রথম শ্রেণির প্রোটিনের অন্তর্গত।

২. দ্বিতীয় শ্রেণির প্রোটিন (Second class protein) : যে সকল প্রোটিনে সব কয়টি অপরিহার্য অ্যামিনো থাকে না সেগুলো দ্বিতীয় শ্রেণির প্রোটিন বা অসম্পূর্ণ প্রোটিন। যেমন-কয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া প্রোটিন।

Content added By

লিপিড এর গঠন ও শ্রেণিবিভাগ

লিপিড (Lipid) বা স্নেহ পদার্থ

কার্বন, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন সহযোগে গঠিত ফ্যাটি এসিড ও গ্লিসারলের উচ্চ আণবিক ওজন বিশিষ্ট এস্টারকে মাকে বা লিপিড বলে) জার্মান বিজ্ঞানী Bloor ১৯৪৩ সালে সর্বপ্রথম Lipid শব্দটি ব্যবহার করেন। এগুলো" সাধারণভাবে স্নেহ পদার্থ নামে পরিচিত। গ্রিক শব্দ 'lipos'-এর অর্থ হলো ফ্যাট।

“লিপিড হচ্ছে উদ্ভিদ ও প্রাণিদেহে বিদ্যমান গুরুত্বপূর্ণ জৈব রাসায়নিক পদার্থ যা হাইড্রোজেন (H), অক্সিজেন (O) কার্বন (C) নিয়ে গঠিত এবং এগুলো পানিতে অদ্রবণীয় কিন্তু কিছু জৈব দ্রাবক যেমন-ইথার, ক্লোরোফর্ম, কার্বনটেট্রাক্লোরাইড, পেট্রোল, বেনজিন, হেক্সেন ইত্যাদিতে দ্রবণীয়।

লিপিডের উৎস : লিপিডের উৎস দু'ধরনের-

১. প্রাণিজ উৎস : প্রাণিজ চর্বি, মাখন, ঘি ইত্যাদি লিপিডের প্রাণিজ উৎস।

২. উদ্ভিজ্জ উৎস : কিছু উদ্ভিদের বীজ; যেমন-সয়াবিন, তিল, তিসি, সূর্যমুখী, বাদাম, পাম, নারকেল, জলপাই তৈবাদ লিপিডের উদ্ভিজ্জ উৎস।

লিপিডের গঠন : (সাধারণভাবে গ্লিসারল ও ফ্যাটি এসিডের সমন্বয়ে লিপিড গঠিত হয়। ফসফোলিপিউ-এ গ্লিসারল ও ফ্যাটি এসিড ছাড়া ফসফরাস এবং নাইট্রোজেন বেস থাকে। গ্লাইকোলিপিড - এ ফ্যাটি এসিড, তাগার (হেক্সোজ) ও নাইট্রোজেনঘটিত পদার্থ থাকে। মোমজাতীয় লিপিড-এ গ্লিসারল - এর পরিবর্তে অ্যালকোহল বা কোলেস্টেরোল থাকে।

লিপিডের বৈশিষ্ট্য :

(i) লিপিড পার্নিতে অদ্রবণীয়; এটি বর্ণ, স্বাদ ও গন্ধহীন । 
(ii) ক্লোরোফর্ম, অ্যাসিটোন, বেঞ্জিন ইত্যাদিতে লিপিড দ্রবীভূত হয়। 
(iii) সাধারণ উষ্ণতায় যেসব লিপিড কঠিন অবস্থায় থাকে তাদের স্নেহদ্রব্য বা ফ্যাট বলে এবং যেসব লিপিড তরল অবস্থায় থাকে সেগুলোকে তেল বলে। 
(iv) লিপিড ফ্যাটি এসিডের এস্টার হিসেবে বিরাজ করে। 
(v) লিপিডের নির্দিষ্ট কোন গলনাঙ্ক নেই; আণবিক ওজন বৃদ্ধির সাথে সাথে গলনাঙ্ক বৃদ্ধি পায়। 
(vi) আর্দ্র লিঙ্গেষণে লিপিড ফ্যাটি এসিড ও গ্লিসারলে পরিণত হয়। 
(vii) পানি থেকে লিপিডের আপেক্ষিক গুরুত্ব কম, তাই এটি পানিতে ভাসে।

রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে লিপিড প্রধানত তিন ধরনের। যথা-সরল, যৌগিক ও উদ্ভূত। নিচে এগুলোর বর্ণনা দেওয়া হলো।

সরল লিপিড (Simple lipids) যে সব লিপিডের বিশ্লেষণে লিপিড বা স্নেহদানা ছাড়া অন্য কোন পদার্থ পাওয়া যায় না তাদের সরল লিপিড বলে। লিপিড দুপ্রকার যথা- (ক) স্নেহদ্রব্য বা ট্রাইগ্লিসারাইড ও (2) মোম ।

ক. স্নেহদ্রব্য বা ট্রাইগ্লিসারাইড (Triglycerides) : তিন অণু ফ্যাটি এসিড এবং এক অণু গ্লিসারল এস্টারিভূত হয়ে স্নেহদ্রব্য বা ট্রাইগ্লিসারাইড গঠন করে।  ট্রাইগ্লিসারাইড দুধরনের, যথা-

চার্বি (Fals) : যেসব ট্রাইগ্লিসারাইড সহ (saturated) ফ্যাটি এসিড তৈরি করে তাদের চর্বি বলে পালক তাপনারায় কঠিন অবস্থায় থাকে। এদের মূলনও অনেক বেশি প্রায় ৭০° সেলসিয়াস-এর কাছাকাছি। প্রাণ চর্বি, মাছের তেল, মাখন, ঘি, উদ্ভিজ্জ চর্বি, নারকেল তেল, পাম অয়েল, অলিভ অয়েল প্রভৃতি চর্বির উদাহরণ।

তেল (Oil) : যেসব ট্রাইগ্লিসারাইড অসম্পৃক্ত (unsaturated) ফ্যাটি এসিড তৈরি করে তাদের তেল বলে। তেল সাধারণ তাপমাত্রায় তরল অবস্থায় থাকে। এদের গলনাঙ্ক খুব কম মাত্রা ৫° সেলসিয়াস-এর কাছাকাছি। উদ্ভিদের বীজে। প্রচুর পরিমাণ তেল সঞ্চিত থাকে। উদাহরণ- সকল ভোজ্য উদ্ভিজ্জ তেল। স্নেহস্রব্যের কাজ : উদ্ভিদের ফল ও বীজে এরা সঞ্চিত খাদ্য হিসেবে জমা থাকে। অঙ্কুরোদগমের সময় বীজের

সঞ্চিত চর্বি ও তেল কার্বোহাইড্রেটে রুপান্তরিত হয়ে বর্ধিষ্ণু ভ্রূণের খাদ্য যোগান দেয়।

খ. মোম (Wax) : ফ্যাটি এসিড, ট্রাইহাইড্রিক অ্যালকোহলের পরিবর্তে মনোহাইড্রিক আলকোহল বিশিষ্ট উপাদানের সঙ্গে এটি দ্রবীভূত হলে, তাকে মোম বলে । এখানে যে কার্বন শৃঙ্খল রয়েছে সেখানে উপস্থিত কার্বনের সংখ্যা ২৪-৩৬৫। লোমের বিশেষ বর্ণ বা গন্ধ নেই। মোম পানিতে অদ্রবণীয় এবং রাসায়নিকভাবে নিষ্ক্রিয়, কারণ এদের হাইড্রোকার্বন চেইন-এ কোন ডবল বন্ড থাকে না। সাধারণ তাপমাত্রায় মোম কঠিন থাকে। কাও, পাতা, ফুল, ফলের "ভুরু, দেহাররণের পৃষ্ঠে মোম পাওয়া যায় যা ত্বককোষ থেকে ক্ষরিত হয়।)

কাজঃ  মোম উদ্ভিদ অঙ্গের উপরিতলে প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে । মৌচাক প্রাকৃতিক মোম দিয়ে তৈরি। । সাধারণত কান্ত, বোটা, পাতা ও ফলের উপর প্রতিরোধক স্তর হিসেবে অবস্থান করে।  মোম থেকে মোমবাতি তৈরি হন। বিভিন্ন প্রসাধন শিল্পেও মোম ব্যবহৃত হয়।

২. যৌগিক লিপিড (Compound lipids)

সরল লিপিডের সাথে কিছু জৈব ও অজৈব যৌগ মিশ্রিত হয়ে যৌগিক লিপিড উৎপন্ন করে। যৌগিক লিপিড স্নেহ জাতীয় পদার্থের যৌগ। অম্লেই ভাতা যোগটি যোস্থেটিক গ্রুপ (prosthetic group) নামে পরিচিত। প্রোথেটিক গ্রুপের ভিরিতে যৌগিক লিপিডবে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়, যথা-

ক. ফসকোলিপিড (Phosphlipid) : (সারল ও ফ্যাটি এসিড ছাড়াও যে লিপিডে একটি ফসফেট থাকে সে
লিপিডকে ফলুকোলিপিড বলে । দুধু অণু ফ্যাটি এসিড, এক অণু ফসফোগ্লিসারিক এসিড ও উগ্রসারণের সমন্বয়ে ফুল ফোলিসির গঠিত এ সংযালিপিডের বিশেষ উপাদান হলো ক্ষমাক্রোটাইডির এসিড। ফসফোলিপিডের ফ্যাটি এসিড পানিতে অদ্রবণীয় হলেও কোলিন, ইথানল, অ্যামাইন, প্রিসারল পানিতে দুরনীয়। কোষের প্লাজমামেমব্রেন, মাইটোকন্ড্রিয়া ও ক্লোরোপ্লাস্টের পর্দা এবং নিউক্লিয়ার পর্দা ফসফোলিপিড দিয়ে গঠিত। লেসিথিনই প্রথম শনাক্তকৃত ফসফোলিপিড।

কাজ

(i) কোষঝিল্লি এবং বিভিন্ন কোষ অঙ্গাণুর ঝিল্লির গাঠনিক উপাদান হিসেবে কাজ করে।

(ii) কোষের আয়ন বাহন হিসেবে কাজ করে।

(iii) কোষের ভেদ্যতা ও পরিবহন প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে।

(iv) কয়েকটি এনজাইমের প্রোস্থেটিক গ্রুপ হিসেবে কাজ করে।

(v) রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে।

খ. গ্লাইকোলিপিড (Glycolipid) : সরল লিপিডের (ফ্যাটি এসিড) সাথে কার্বোহাইড্রেট যুক্ত থাকলে সে যৌগকে মূর্তি কোলিপিড বলে। এক্ষেত্রে লিপিডের সাথে গ্লুকোজ বা গ্যালাকটোজ যুক্ত থাকে। (লিপিডের সাথে গ্যালাকটোর এ থাকলে তাকে গ্যালাকটোলিপিড বলে) সবুজ উদ্ভিদকোষের ক্লোরোপ্লাস্ট, মোরোন অধিক পরিমাণে গ্লাইকোলিপিড থাকে। গ্লাইকোলিপিতে শনাক্ত করা হয়েছে সূর্যমুখী ও তুলার বীজ থেকে ।কাজ: এগুলো ক্লোরোপ্লাস্ট মেমব্রেন গঠনে অংশ নেয় এবং সালোকসংশ্লেষণে ভূমিকা পালন করে। মেরুদণ্ডী প্রাণীর স্নায়ুটিস্যুতে সেরিব্রোসাইড (cerebroside) নামক সাইকোলিপিড থাকে।

গ. লিপোপ্রোটিন (Lipoprotein) : লিপিড ও প্রোটিনের সমন্বয়ে যে জৈব রাসায়নিক পদার্থ গঠিত হয় তাকে লিপোপ্রোটিন বলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে এদের লিপিড অংশ কোলেস্টেরল এস্টার এবং ফসফোলিপিড দিয়ে গঠিত থাকে। কোষের মাইটোকন্ড্রিয়া ও ক্লোরোপ্লাস্ট মেমব্রেন-এ লিপোপ্রোটিন থাকে। এগুলো কোষ অঙ্গাণুর গাঠনিক উপাদান হিসেবে। বিদ্যমান থাকে। মাইটোকন্ড্রিয়াতে ইলেক্ট্রণ ট্রান্সপোর্ট সিস্টেমের সাথে জড়িত থেকে শক্তি উৎপাদনে সাহায্য করে।

ঘ. সালফোলিপিড (Sulpholipid) : যে গ্লাইকোলিপিডে সালফার থাকে তাকে সালফোলিপিড বলে। উদ্ভিদে প্রচুর পরিমাণে সালফোলিপিড পাওয়া যায় এবং এর উপস্থিতি ক্লোরোপ্লাস্টে সীমাবদ্ধ থাকে।

৩. উদ্ভূত বা উৎপাদিত লিপিড (Derived lipids) যৌগিক লিপিডের আর্দ্রবিশ্লেষণের ফলে যে লিপিড উদ্ভূত হয়, তাকে উদ্ভূত লিপিড বলে। যেমনঃ টারপিনস, রাবার ইত্যাদি। নিচে এদের সম্পর্কে বর্ণনা দেয়া হলো। 

ক. স্টেরয়েড (Steroids) : যেসব আইসোপিনয়েড যৌগ ২৭-২৯টি কার্বন পরমাণু বিশিষ্ট তাদেরকে স্টেরয়েড ফুলে। স্টেরয়েড-এ হাইড্রক্সিল গ্রুপ থাকলে তাদেরকে স্টেরল বলা হয়। কোলেস্টেরল, 3-সিটোস্টেরল, স্টিগমাস্টেরল, ডিজিটালিন, স্ত্রী ও পুরুষের যৌন রেমোন অ্যাড্রিনোকটিকাল হরমোন প্রভৃতি স্টেরয়েড-এর উদাহরণ। বিভিন্ন প্রকার উকিৎসায় স্টেরয়েড ব্যবহৃত হয় 1 ডিজিট্যালিন নামক স্টেরয়েড ঔষধ হিসেবে হৃদরোগে ব্যবহৃত হয়। অতিবেগুনী রশ্মির প্রভাবে আর্গোস্টেরল ভিটামিন D তে পরিণত হয়।

কোলেস্টেরল (Cholesterol) : এটি একটি জটিল মুনোহাইড্রিক গৌণ অ্যালকোহলিক যৌগ। এটি সাদা, স্ফটিকাকার বস্তু যা পানিতে অদ্রবণীয় কিন্তু ক্লোরোফর্ম, ইথার, অ্যালকোহল ও অন্যান্য চর্বি দ্রাবকে দ্রবণীয়। ফ্যাটি এসিডের সাথে কোলেস্টেরল বিক্রিয়া করে মোম গঠন করে। কোলেস্টেরল কোষের একটি অতি প্রয়োজনীয় উপাদান। এটি কোষঝিল্লির প্রবেশ্যতা নিয়ন্ত্রণ করে। আলু ও চুপরি আলুতে কোলেস্টেরল পাওয়া যায়। অধিক পরিমাণে কোলেস্টেরল প্রাণিদেহে পাওয়া যায়। কোলেস্টেরল দুধরনের। যথা-

লো-ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন (Low Density Lipoprotein, বা LDL) এবং ০. ১৫-২০%

হাই-ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন (High Density Lipoprotein, বা HDL)। ০.১৫ - ১.২০%

মানুষের রক্তে HDL এর মাত্রা বেশি (40<mg/dl) থাকা ভালো। তবে LDL এর মাত্রা কম (<100mg/dl) থাকা ভালো।। মানুষের রক্তে কোলেস্টেরল-এর স্বাভাবিক মাত্রা ০.১৫-১.২০% । স্ত্রীলোকের রক্তে HDL বেশি থাকে এবং LDL কম থাকে। এজন্য পুরুষ অপেক্ষা স্ত্রীলোকের হৃদরোগ কম হয়। রক্তে কোলেস্টেরল স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। থাকলে রক্তনালি সরু হয়ে হৃদযন্ত্রে রক্ত চলাচল কমে যায়। ফলে করোনারি থ্রম্বোসিস নামক মারাত্মক হৃদরোগ সৃষ্টি হয়।

খ. টারপিনস (Terpenes) : ১০ থেকে ৪০টি পাঁচ কার্বনবিশিষ্ট আইসোপ্রিন (isoprene) এককের সমন্বয়ে টারপিন গঠিত। এর সাধারণ সংকেত (C5H8) । তুলসী, পুদিনা, পাইন বৃক্ষ ইত্যাদিতে উদ্বায়ী তেল হিসেবে পাওয়া যায়।

কাজ : (i) বার্নিশের কাজে ব্যবহৃত হয়। (ii) সুগন্ধি প্রসাধনী তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।

গ. রাবার : (প্রায় ৩০০০ থেকে ৬০০০ আইসোপ্রেন একক যুক্ত হয়ে রাবার তৈরি হয় ) Hevea brasiliensis নামক উদ্ভিদ থেকে প্রাকৃতিক রাবার পাওয়া যায়। এছাড়া Ficus elastica, Palaquium gutta, Caslilla elastica ইত্যাদি বৃক্ষের কষ থেকে ও সামান্য পরিমাণ রাবার সংগ্রহ করা যায়।

কাজ : বাস, ট্রাক, মোটরগাড়ী, সাইকেল, রিক্সা ইত্যাদির টায়ার তৈরি করার জন্য রাবার ব্যবহৃত হয়।

লিপিড-এর রাসায়নিক উপাদান

লিপিড সাধারণত কার্বন, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন নিয়ে গঠিত। এতে ফ্যাটি এসিড ও গ্লিসারল ছাড়া ফসফরাস ও নাইট্রোজেন ক্ষারকও থাকতে পারে। মোমে গ্লিসারল থাকে না- এর পরিবর্তে অ্যালকোহল বা কোলেস্টেরল থাকে । গ্লাইকোলিপিডে ফ্যাটি এসিড, হেক্সোজ স্যুগার ও নাইট্রোজেনঘটিত পদার্থ থাকে।

ভিন্নধর্মী লিপিডঃ

কিছু লিপিডের রাসায়নিক গঠন ট্রাইগ্লিসারাইডস ও ফসফোলিপিড থেকে আলাদা। এদের ভিন্নধর্মী লিপিড বলে, যেমন-ক্যারোটিনয়েড (carotenoids) এবং ভিটামিন (Vitamins)। ক্যারোটিনয়েড সবুজ উদ্ভিদের এক ধরনের রঞ্জক পদার্থ। এই রঞ্জক পদার্থ সালোকসংশ্লেষণের সময় সূর্যালোক শোষণ করে। গাজরের কমলা ও হলুদ বর্ণ ক্যারোটিনয়েডের জন্য হয়। শরৎকালে পাতার রং কমলা-হলুদ বর্ণের হয় ক্যারোটিনয়েডের কারণে। চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিন-A, D, E এবং K পাঁচ কার্বনবিশিষ্ট আইসোপ্রিন (isoprene) একক থেকে সংশ্লেষিত হয়।
 

ভিটামিন- - A : এটি ক্যারোটিনয়েড থেকে উৎপন্ন হয়। এর অভাবে রাতকানা ও ত্বক শুষ্ক হয় এবং বৃদ্ধি রোহিত হয়।

ভিটামিন  D : এটি অস্ত্র কর্তৃক ক্যালসিয়াম শোষণ নিয়ন্ত্রণ করে। এর অভাবে হাড়জনিত রোগ হয় ।

ভিটামিন  E : একদল লিপিড ভিটামিন-E হিসেবে পরিচিত। এরা জারণ ও বিজারণ বিক্রিয়ার ক্ষতিকর দিক থেকে কোষকে রক্ষা করে।

ভিটামিন  K : সবুজ শাকসবজিতে পাওয়া যায়। আন্ত্রিক ব্যাক্টেরিয়াতে এটি তৈরি হয় । এরা রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে।

Content added By

জীবদেহে লিপিড-এর ভূমিকাঃ

* লিপিড জীবদেহে খাদ্য হিসেবে সঞ্চিত থাকে। বীজের শস্যে কিংবা বীজপত্রের সঞ্চয়ী কোষে লিপিড জমা থাকে এবং অঙ্কুরোদগমের সময় প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ করে। 

* প্রাণিদেহের ত্বকের নিচে সঞ্চিত চর্বি তাপ নিরোধক হিসেবে কাজ করে।

* ফসফোলিপিড ও গ্লাইকোলিপিড কোষঝিল্লি এবং কোষ অঙ্গাণুর ঝিল্লি গঠনকারী উপাদান। 

* প্রাণীর স্নায়ুতন্তুর মায়েলিন আবরণীর লিপিড স্নায়ু উদ্দিপনা পরিবহনে সহায়তা করে।

* লিপিড ভিটামিন A, D, E ও K-এর দ্রাবক।

* ফসফোলিপিড জীবদেহের কতিপয় এনজাইমের প্রোস্থেটিক গ্রুপ হিসেবে কাজ করে । লিপিড থেকে কিছু প্রোটিন (লিপোপ্রোটিন), হরমোন এবং কোলেস্টেরল সংশ্লেষিত হয়।

* লিপোপ্রোটিন শক্তি উৎপাদনে সহায়তা করে । 

* গ্লাইকোলিপিড সালোকসংশ্লেষণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। 

* ফসফোলিপিড আয়নের বাহক হিসেবেও কাজ করে।

* কিছু মোম জাতীয় লিপিড উদ্ভিদের কান্ড ও ত্বকে (কিউটিকল) বিদ্যমান থেকে প্রস্বেদনের হার হ্রাস করে ।

* টারপিন জাতীয় লিপিড উদ্ভিদে সুগন্ধি সৃষ্টি করে।

* মানবদেহে বিটা ক্যারোটিন ভেঙ্গে দুই অণু ভিটামিন -A তৈরি করে, যা থেকে পরে রডোপসিন (rhodopsin) তৈরি হয় যা দৃষ্টিশক্তি দান করে। মিষ্টি আলু, গাজর, টমেটো ও ডিমের কুসুমে বিটা ক্যারোটিন পাওয়া যায়। 

* কোলেস্টেরল থেকে যৌনহরমোন ও ACH সংশ্লেষিত হয়। এটি কোষঝিল্লির প্রবেশ্যতা নিয়ন্ত্রণ করে।

Content added By

এনজাইম এর ভৌত ও রাসায়নিক ধর্ম

এনজাইমঃ জীবদেহে অনন্য অণুঘটক হচ্ছে এনজাইম বা উৎসেচক। এদের সবগুলোই প্রোটিন জাতীয়। এনজাইম নিজেরা সরাসরি রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশ গ্রহণ না করে কোষীয় বিক্রিয়ার হার হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটিয়ে বিক্রিয়ার সাম্যতা সৃষ্টি করতে সহায়তা করে । বিক্রিয়া শেষে অপরিবর্তিত ভাবে মুক্ত হয়ে যায়। Enzyme শব্দটির উদ্ভব হয়েছে গ্রিক en = in, zyme = yeast থেকে। ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে জার্মান শারীরতত্ত্ববিদ Kuhne সর্বপ্রথম enzyme শব্দটি ব্যবহার করেন। জার্মান বিজ্ঞানী Edward Buchner ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে চিনির ফারমেনটেশন ঘটানোর জন্য দায়ী যৌগটিকে zymasc এনজাইম হসেবে শনাক্ত করেন। এজন্য তাঁকে ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয়। ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে James B. Sumner নামক একজন বিজ্ঞানী সর্বপ্রথম উদ্ভিদকোষ থেকে urease নামক একটি এনজাইমকে স্ফটিকাকারে পৃথক রতে সক্ষম হন এবং বলেন এনজাইমগুলো প্রোটিন। পরবর্তীতে আরও এনজাইম পৃথক করা হয় এবং সর্বজনভাবে কৃত হয়-এনজাইম হলো প্রোটিন জাতীয় পদার্থ ।সজীব কোষে বিদ্যমান যে প্রোটিন জৈব-রাসায়নিক বিক্রিয়ার হারকে নিয়ন্ত্রণ করে কিন্তু বিক্রিয়া শেষে অপরিবর্তিত থাকে তাকে এনজাইম বা উৎসেচক বলে। এনজাইমকে জৈব অণুঘটক-ও বলা হয়।

এনজাইমের ভৌত বৈশিষ্ট্য/ধর্ম (Properties of Enzyme): এনজাইমের বৈশিষ্ট্য হলো- 


* প্রধানত প্রোটিন দ্বারা তৈরী এবং কোষে সাধারণত কোলয়েড (colloid) রূপে থাকে।
* কার্যকর হওয়ার পূর্বে এদের পানি প্রয়োজন হয়। - এরা জীবিত কোষেই তৈরি হয়।
* এনজাইম রাসায়নিক বিক্রিয়া ত্বরান্বিত করে কিন্তু নিজে পরিবর্তিত হয় না। 
* প্রতিটি এনজাইম নির্দিষ্ট সাবস্ট্রেটের উপর ক্রিয়া করে এবং তাঁদের নির্দিষ্ট পরিবর্তন ঘটায়। যেমন- লাইপেজ চর্বিকে ফ্যাটি এসিড ও গ্লিসারলে পরিণত হয়।
* প্রায় সকল এনজাইম পানিতে দ্রবণীয় তবে লিপোপ্রোটিন দ্বারা তৈরী এনজাইমগুলো পানিতে দ্রবণীয় নয়। এরা অ্যালকোহলে (১০০%) অদ্রবণীয়।*এনজাইমের সক্রিয়তা একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রার ওপর নির্ভরশীল। সাধারণত ২৫-৪০° সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এনজাইমের ক্রিয়া সবচেয়ে ভাল। বেশি তাপমাত্রায় এনজাইম নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু কম তাপে নষ্ট হয় না, তবে তার কার্যকারিতা কমে যায় অথবা বন্ধ হয়ে যায়। 
*একটি নির্দিষ্ট এনজাইম একটি নির্দিষ্ট pH (হাইড্রোজেন আয়ন) সীমায় সর্বাধিক সক্রিয়। উদাহরণস্বরূপ, পেপসিন ২ pH মাত্রায় এবং ট্রিপসিন ৮.২ pH মাত্রায় সবচেয়ে সক্রিয় । 
*এনজাইম স্বল্প পরিমাণে খুব সক্রিয়। উদাহরণ, এক অণু ক্যাটালেজ এনজাইম প্রায় পঞ্চাশ লক্ষ হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড অণুকে ভেঙ্গে পানি ও হাইড্রোজেনে পরিবর্তন করতে পারে।

এনজাইমের রাসায়নিক প্রকৃতিঃ

*এনজাইম প্রোটিন হওয়ায় এরা কোলয়েডধর্মী
*এনজাইম অণু প্রোটিন অণুর মতো বৃহদাকার এবং প্রোটিনের মতো আণবিক ওজনসম্পন্ন।
* কিছু সংখ্যক স্নেহ বিশ্লেষণকারী এনজাইম ছাড়া সব এনজাইমই পানি, অ্যালকোহল ও গ্লিসারলে দ্রবণীয়। 
*সব এনজাইমই প্রোটিন, তাই প্রোটিন গঠনকারী অ্যামিনো এসিডই এনজাইমের মূল গাঠনিক উপাদান।
*এনজাইমের সাথে প্রোটিন নয় এমন একটি অংশ যুক্ত থাকতে পারে। সংযুক্ত অংশটি। প্রোটিনের সাথে দৃঢ়ভাবে আবদ্ধ থাকলে তাকে প্রস্থেটিক গ্রুপ এবং শিথিলভাবে আবদ্ধ থাকলে তাকে কো-এনজাইম বলে।

Content added By

এনজাইমের ক্রিয়ার প্রকৃতি

এনজাইমের ক্রিয়ার প্রকৃতি (Nature of Enzyme Action)

এনজাইমের কাজ হলো কোনো বিক্রিয়কে বা সাবস্ট্রেটকে ভেঙে এক বা একাধিক বিক্রিয়ালব্ধ পদার্থ বা প্রোডাক্টে পরিণত করা। সাবস্ট্রেটটি প্রোডাক্টে পরিণত হওয়ার সময় তাকে শক্তির বাধা (energy barrier) অতিক্রম করতে হয়। এই বাধা অতিক্রম করতে যে শক্তি ব্যয় করতে হয় তাকে কার্যকরী শক্তি বা সক্রিয়করণের শক্তি (energy of activation) বলে । অধিকাংশ এনজাইম বিক্রিয়ায় কার্যকরী শক্তির মান মাত্র 2000-8000 cal/mole। সাবস্ট্রেটের সঙ্গে এনজাইমযুক্ত হলে কার্যকরী শক্তির

চাহিদা হ্রাস পায়, এর ফলে বিক্রিয়ায় গতি ত্বরান্বিত হয়। এনজাইমের এক বা একাধিক বিশেষ সাইট বা স্থান থাকে। যেমন—

সক্রিয় স্থান বা অ্যাকটিভ সাইট (Active site): এনজাইমের এক বা একাধিক সক্রিয় স্থান বা অ্যাকটিভ সাইট থাকে। এ স্থানেই সাবস্ট্রেট যুক্ত হয়। 

অ্যালোস্টেরিক সাইট (Allosteric site): এ স্থানে কিছু এনজাইমের বিশেষ অণু বা ইফেক্টর যুক্ত হয়, যা ঐ এনজাইমে বিশেষ অণু বা ইফেক্টর যুক্ত হয়, যা ঐ এনজাইমের কাজকে নিয়ন্ত্রণ করে। 

ইফেক্টর অ্যাকটিভেটর বা ইনহিবিটর (Lock and Key Hypothesis): হিসেবে কাজ করে। যেসব পদার্থ এনজাইমের কাজে বিঘ্ন ঘটায়। তারাই ইনহিবিটর। ইনহিবিটর আগেই এনজাইমের সাথে যুক্ত হয়ে গেলে অ্যাকটিভ সাইটে সাবস্ট্রেট আর যুক্ত হতে পারে না। ইনহিবিটর অ্যাকটিভ সাইট নষ্ট করে দিতে পারে।

 এনজাইম এর ক্রিয়ার কৌশলঃ

১. তালা-চাবি মতবাদ (Lock and Key Hypothesis) : জার্মান বিজ্ঞানী এমিল ফিশার ( Emil Fischer, 1874) এই মতবাদটি প্রবর্তন করেন। তাঁর মতবাদ অনুযায়ী এনজাইমের আণবিক গঠন বা আকৃতি অনমনীয় (rigid)। সাবস্ট্রেট এনজাইমের সক্রিয় স্থানে অনমনীয় (rigid)। সাবস্ট্রেট এনজাইমের সক্রিয় স্থানে (active site) যুক্ত হয়। যেমন- একটি নির্দিষ্ট চাবি (Key) কোনো একটি নির্দিষ্ট তালাতে (Lock) প্রবেশ করতে ও যুক্ত হতে পারে। ফিশারের (Lock & key) মডেল অনুসারে, এনজাইমের সক্রিয় স্থানটি (active site) অনমনীয় ও তার আকৃতি পূর্বনির্ধারিত ।

২. এনজাইম-সাবস্ট্রেট যৌগ মতবাদ (Enzyme substrate compound theory) : মাইকেলিস (Michaelish) এবং মেনটেন (Menten) 1912 সালে লক্ষ করেন যে, সাবস্ট্রেটের অণু আর্দ্রবিশ্লিষ্ট হওয়ার পূর্বে এনজাইমের সঙ্গে সংযুক্ত হয় এবং পরে বিক্রিয়ালব্ধ পদার্থ হিসেবে এনজাইমের উপরিতল থেকে নির্গত হয়। এর উপর ভিত্তি করে তাঁরা এনজাইম-সাবস্ট্রেট যৌগ গঠনের মতবাদ প্রচার করেন। তাঁদের মতবাদ অনুসারে, এনজাইম বিক্রিয়া দুটি পর্যায়ে সম্পন্ন হয়। প্রথম পর্যায়ে এনজাইম (E) সাবস্ট্রেটের (S) সঙ্গে যুক্ত হয়ে এনজাইম-সাবস্ট্রেট (ES) যৌগ গঠন করে। দ্বিতীয় পর্যায়ে এই অন্তর্বর্তী যৌগ বিশ্লিষ্ট হলে বিক্রিয়ালব্ধ পদার্থ (P) নির্গত হয় এবং এনজাইম মুক্ত হয়। যথা—

(i) E+S→ES 

(ii) ES →E+P 

তাঁদের এই মতবাদটি তালা-চাবি মতবাদের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ ।

৩. আবেশিত উপযুক্ততা মতবাদ (Induced Fit Hypothesis) : বিজ্ঞানী ড্যানিয়েল কোশল্যান্ড (Daniel Koshland, 1958) এই মতবাদের প্রবর্তক। তাঁর এনজাইমের সক্রিয় স্থানগুলো (active site) যথেষ্ট নমনীয়। সক্রিয় স্থানটি নমনীয় হওয়ার জন্য সাবস্ট্রেট এনজাইমের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সাথে সাথে এনজাইসের আণবিক আকৃতির পরিবর্তন ঘটে, যা এনজাইমের সক্রিয় স্থানকে আরও দৃঢ় করে । এর ফলে সাবস্ট্রেট দৃঢ়ভাবে এনজাইমের সঙ্গে যুক্ত বা ফিট হতে পারে এবং সাবস্ট্রেটের বিভিন্ন বস্তুকে দুর্বল করে বিক্রয়ালব্ধ পদার্থ (product) পরিণত হতে সাহায্য করে। এই মতবাদটি বর্তমানে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য। এই মতবাদকে তালা-চাবি (lock and key) মতবাদের সংশোধিত সংস্করণ বলা যেতে পারে। [কোশল্যান্ডের মত অনুসারে, এনজাইমের সক্রিয় স্থানে দুটি অংশ থাকে- বাট্রেসিং গ্রুপ (buttressing group) এবং ক্যাটালিটিক গ্রুপ (catalytic group)! বাট্রেসিং গ্রুপ সাবস্ট্রেটকে ধরে রাখে এবং ক্যাটালিটিক গ্রুপ সাবস্ট্রেটের বিভিন্ন বস্তুকে দুর্বল করে বিক্রিয়ালব্ধ পদার্থে (product) পরিণত হতে সাহায্য করে।

Content added By

এনজাইম এর শ্রেণিবিন্যাস

এনজাইমের শ্রেণিবিন্যাস

উদ্ভিদ ও প্রাণিদেহে এনজাইমের সংখ্যা অনেক। অদ্যাবধি সহস্রাধিক এনজাইম শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। গঠন প্রকৃতি ও কী ধরনের বিক্রিয়াকে প্রভাবিত করে তার উপর ভিত্তি করে এনজাইমকে শ্রেণিবিন্যাস করা যায়।

ক. গঠন প্রকৃতির উপর ভিত্তি করে শ্রেণিবিন্যাস

সরল এনজাইম : যে এনজাইমের সম্পূর্ণ অংশই শুধু প্রোটিন দিয়ে গঠিত তাকে সরল এনজাইম বলা হয় যেমন-সুক্রেজ, পেপসিন ইত্যাদি।

যৌগিক এনজাইম: যে এনজাইমের প্রোটিন অংশের সাথে একটি অপ্রোটিন অংশ সংযুক্ত থাকে তাকে যৌগিক এনজাইম বলে এঁদেরকে হলো এনজাইম বলে। এদের দুটি অংশ থাকে- একটি প্রোটিন অংশ অপরটি অপ্রোটিন অংশ যেমন-FAD. NAD.

খ. কী ধরনের বিক্রিয়াকে প্রভাবিত করে তার উপর ভিত্তি করে শ্রেণিবিন্যাস

১. হাইড্রোলাইটিক এনজাইম বা হাইড্রোলেজ (Hydrolase): এ ধরনের এনজাইম সাবস্ট্রেট অণুর একটি বিশেষ বন্ধনীতে পানির আয়নকে (H+, OH−) সংযুক্ত করে। ফলে সাবস্ট্রেট অণুর আর্দ্রবিশ্লেষণ (hydrolysis) ঘটে । সুক্রেজ, এস্টারেজ, লাইপেজ, কার্বহাইড্রেজ, ফসফেটেজ ইত্যাদি হাইড্রোলাইটিক এনজাইমের প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

২. অক্সিডোরিডাকটেজ (Oxido-reductase) : এ ধরনের এনজাইম কোন পদার্থের সাথে হাইড্রোজেন, অক্সিজেন কিংবা ইলেকট্রন যোগ করে অথবা কোন পদার্থ থেকে হাইড্রোজেন, অক্সিজেন কিংবা ইলেকট্রন বিতাড়িত করে (অক্সিজেন সংযোগ বা হাইড্রোজন বিয়োজন বা ইলেকট্রন অপসারণকে বলা হয় অক্সিডেশন (Oxidation) বা জারণ) আবার (হাইড্রোজেন সংযোগ বা অক্সিজেন বিয়োজন বা ইলেকট্রন যোগ হলো তাকে বলে রিডাকশন (reduction) বা বিজারণ। যেমন-সাইটোক্রোম অক্সিডেজ, ফসফোগ্লিসারাল্ডিহাইড ডিহাইড্রোজিনেজ ।এখানে NAD বিজারিত হয়ে (হাইড্রোজেন যুক্ত হয়ে) NADH + H+ তে পরিণত হয়েছে এবং ৩-ফসফোগ্লিসারাল্ডিহাইড হাইড্রোজেন হারিয়ে জারিত (oxidized) হয়েছে।

৩. ট্রান্সফারেজ (Transferase) : (যে এনজাইম কোন একটি সাবস্ট্রেট থেকে একটি গ্রুপকে (যেমন-NH2) বিচ্ছিন্ন করে অন্য একটি গ্রুপের সাথে সংযুক্ত করে তাকে ট্রান্সফারেজ এনজাইম বলা হয়।

৪. আইসোমারেজ (Isomerase) যে এনজাইমের কার্যকারিতায় কোন সাবস্ট্রেট থেকে তার আইসোমার উৎপন্ন হয় তাকে আইসোমারেজ এনজাইম বলে।

৫. লাইগেজ (Ligase) : এসব এনজাইম ATP-এর সহায়তায় দুই বা ততোধিক যৌগের মধ্যে বন্ধন সৃষ্টি করে নতুন যৌগ তৈরি করে। যেমন- অ্যাসিটাইল COA সিনথেটেজ, গ্লুটামিন সিনথেটেজ।

৬. লাইয়েজ (Lyase) : (এসব এনজাইম কোন অণুকে আর্দ্রবিশিষ্ট না করেই দুভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। যেমন- ফিউমারেজ, কার্বোক্সিলেজ, অ্যালডোলেজ ইত্যাদি।

৭. কার্বক্সিলেজ (Carboxylase) :যে এনজাইম কোন সাবস্ট্রেট থেকে CO2 অণুকে বিচ্ছিন্ন করে অথবা অন্য কোন যৌগের সাথে CO2 অণুকে সংযুক্ত করে তাকে কার্বক্সিলেজ এনজাইম বলা হয়।

৮. এপিমারেজ (Epimerase) : (যে এনজাইমের কার্যকারিতায় কোন শর্করাজাতীয় সাবস্ট্রেটকে তার এপিমার-এ পরিণত করে তাকে এপিমারেজ এনজাইম বলা হয়।

Content added By

এনজাইম এর ব্যবহার

ব্যবহারিক জীবনে এনজাইমের প্রয়োগঃ

১. ফলের রস প্রভূত (Preparation of fruit juice) : আম, আঙ্গুর, আপেল, কমলালেবু ইত্যাদি রস উৎপাদনে এনজাইম ব্যবহার করা হয়। এসব ফলের রস উৎপাদনের সময় পেকটিক এনজাইম ব্যবহার করলে রসের ঘোলাে অবস্থা কেটে যায় এবং রস পরিষ্কার ও সুস্বাদু হয়। 

২. পনির তৈরি (Making cheese) : বহু বছর আগে থেকে পনির তৈরিতে রেনিন ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। কাজের জন্য দুগ্ধপোষ্য বাছুর জবাই করে তার পাকস্থলি থেকে এনজাইম রেনিন বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করা হয়। এনজাইম দুধের ননীকে জমাট বাঁধতে সহায়তা করত এবং পরে ননী থেকে পনির তৈরি হত। 

৩. কাপড়ের দাগ মোচন (Destaining of fabrics) : আজকাল কাপড়ের দাগ উঠাতে এনজাইম ব্যবহার করা হয়। এতে কাপড়ের দাগ একেবারেই উঠে যায় কিন্তু কাপড়ের ক্ষতি হয় না। অ্যামাইলেজ, প্রোটিয়েজ, ও লাইপেজ এ কাজে ব্যবহৃত হয়।

৪. চামড়া লোমমুক্তকরণ (Dehairing of hide) : কাঁচা চামড়া থেকে লোম ছাড়াতে প্রোটওলাইটিক এনজাইম ব্যবহৃত হয়।

৫. ক্ষত নিরাময় (Wound healing) : চামড়ায় সৃষ্ট পোড়া ক্ষত নিরাময়ে এনজাইম ব্যবহৃত হয়।

৬. হজম সংশোধন (Correcting digestion) : শরীরে এনজাইমের পরিমাণ হ্রাস পেলে হজমে সমস্যা হয়। এনজাইম প্রয়োগ করলে এ সমস্যা দূর হয়। পেপসিন, অ্যামাইলেজ, পেপেইন প্রভৃতি এনজাইম হজমে সহায়তা করে।

৭. প্রাণ রাসায়নিক বিশ্লেষণ (Analyzing biochemicals) : বর্তমানে ক্লিনিক্যাল বিশ্লেষণে এনজাইম ব্যবহৃত হয় । রক্তে ইউরিয়া ও ইউরিক এসিড শনাক্তকরণে ইউরিয়েজ ও ইউরিকেজ নামক এনজাইম ব্যবহৃত হয়।

 ৮. জমাট রক্ত গলানো (Dissolving blood clot): মস্তিষ্ক ও ধমনির জমাট রক্ত গলাতে ইউরোবাইলেজ নামক এনজাইম ব্যবহৃত হয়।

৯. চোখের ছানির অস্ত্রোপচার (Cataract operation) : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রখ্যাত চক্ষু চিকিৎসক ড. জোসেফ স্পিনা ১৯৮০ সালে ট্রিপসিন এনজাইম দিয়ে চোখের ছানির অস্ত্রোপচার করেন। তিনি সূক্ষ্ণ সুচ দিয়ে ০.০২৫ সেমি প্রশস্ত ছিদ্র করে অপর একটি সূক্ষ্ণ ফাপা সুঁচের মাধ্যমে খুব অল্প পরিমাণ ট্রিপসিন চোখের লেন্সে দেন। ট্রিপসিন এনজাইম চোখের অন্যান্য অংশের কোন ক্ষতি না করে লেন্সের খোলা অংশ গলিয়ে ফেলে। এরপর সেই সূঁচ দিয়ে টেনে খোলা অংশ বের করে অস্ত্রোপচার সফল করা হয়। শিশুর খাদ্যকে সহজপাচ্য করতেও ট্রিপসিন ব্যবহৃত হয়। 

১০. কৃমিনাশক হিসেবে ফেমিন বা ব্রোমালিন এনজাইম ব্যবহার করা হয়।

১১. কাগজ শিল্পে ব্লিচ (bleach) করার কাজে জাইলানেজ, লিগনিনেজ ইত্যাদি এনজাইম ব্যবহৃত হয় ।

Content added By
অন্ত্রে
লোহিত রক্তকণিকায়
শ্বেত রক্তকণিকায়
অনুচক্রিকায়
Promotion